নিউক্লিক এসিড (Nucleic Acid):
ফ্রাঙ্কো-প্রশিয়ান যুদ্ধে আহত সৈনিকদের ব্যান্ডেজ থেকে প্রাপ্ত পুঁজকোষ (pus cells) পরীক্ষা করে সুইস চিকিৎসক ও রসায়নবিদ মিশার (Friedrich Meischer) ১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দে শ্বেত রক্তকণিকার নিউক্লিয়াস থেকে একটি নতুন রাসায়নিক পদার্থ পৃথক করেন এবং নামকরণ করেন নিউক্লিন (nuclein)। ১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দে অল্টম্যান (Altman) নিউক্লিনে এসিডের ধর্ম দেখতে পান এবং এর নামকরণ করেন নিউক্লিক এসিড। নিউক্লিক এসিড কার্বন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, নাইট্রোজেন এবং ফসফরাস মৌল নিয়ে গঠিত। এতে (নাইট্রোজেনের পরিমাণ ১৫% এবং ফসফরাসের পরিমাণ ১০%।
নিউক্লিক এসিড হলো অসংখ্য নাইট্রোজেন বেস (ক্ষারক), পেন্টোজ ভাগার ও ফসফোরিক এসিড সমন্বয়ে গঠিত এসিড যা জীবের বংশগতির ধারাসহ সকল কাজ নিয়ন্ত্রণ করে।)
নিউক্লিক এসিডের মূল উপাদান : হাইড্রোলাইসিসের পর নিউক্লিক এসিডে যে সব উপাদান পাওয়া যায় সেগুলো হচ্ছে- ১. পেন্টোজ শ্যুগার, ২. নাইট্রোজেনঘটিত বেস এবং ৩. ফসফোরিক এসিড। নিচে এদের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেওয়া হলো।
পেন্টোজ শর্করা বা শ্যুগার (Pentose sugar) : পাঁচ কার্বনযুক্ত শর্করাকে বলা হয় পেন্টোজ শ্যুগার। পেন্টোজ শ্যুগার দুধরনের-
রাইবোজ শ্যুগার (Ribose sugar) : নিউক্লিক এসিডে রাইবোজ শ্যুগার বর্তমান থাকলে তাকে রাইবোনিউক্লিক এসিড (Ribonucleic acid, RNA) বলে ।
ডিঅক্সিরাইবোজ শ্যুগার (Deoxyribose sugar) : নিউক্লিক এসিডে ডিঅক্সিরাইবোজ শ্যুগার বর্তমান থাকলে তাকে ডিঅক্সি- রাইবোনিউক্লিক এসিড (DNA) বলে। রাইবোজ এবং ডিঅক্সিরাইবোজ শ্যুগার প্রায় একই রকম গঠনবিশিষ্ট, পার্থক্য হলো ডিঅক্সিরাইবোজ শুগারের ২নং কার্বনে অক্সিজেন অনুপস্থিত্ব (ডিঅক্সি = অক্সিজেন ছাড়া)।
নাইট্রোজেনঘটিত বেস বা ক্ষারক (Nitrogenous base) : নিউক্লিক এসিডে দুধরনের নাইট্রোজেনঘটিত ক্ষারক থাকে । ক্ষারকগুলো নাইট্রোজেন, কার্বন, হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন দিয়ে গঠিত। এরা এক রিং বিশিষ্ট বা দুই রিং বিশিষ্ট হতে পারে। রিং-এর সংখ্যার ভিত্তিতে এরা দুধরনের- পিউরিন ও পাইরিমিডিন।
* পিউরিন (Purine, C5H4N4) : দুই রিং বিশিষ্ট ক্ষারককে পিউরিন বলে। নিউক্লিক এসিডে দুধরনের পিউরিন বেস থাকে-অ্যাডিনিন (Adenine=A) এবং গুয়ানিন (Guanine = G).
* পাইরিমিডিন (Pyrimidine) : এক রিং বিশিষ্ট ক্ষারককে পাইরিমিডিন বলে ।
নিউক্লিক এসিডে তিন ধরনের পাইরিমিডিন ক্ষারক থাকে। যথাঃ- সাইটোসিন(cytosine), থাইমিন (thymine) ও ইউরাসিল(Uracil) । তবে নিউক্লিক এসিডে তিনটি একসাথে থাকেনা, যেকোন দুটি থাকে। একটি পাইরিমিডিন বেস অনুপস্থিত থাকে। যেমন- DNA তে Uracil (U) থাকে না। এবং RNA তে thymine (T) থাকেনা।
ফসফোরিক এসিডঃ নিউক্লিক এসিডের একটি অন্যতম উপাদান হল ফসফোরিক এসিড। এর আনবিক সংকেত H3P4. এসিডে ৩টি সক্রিয় হাইড্রক্সিল গ্রুপ (OH) থাকে। এর দুটি শর্করা এই কাঠামো গঠন করে।
নিউক্লিওসাইড (Nucleosides) : (পেন্টোজ ভাগারের সঙ্গে একটি নাইট্রোজেন বেস (অ্যাডিনিন, গুয়ানিন, সাইটোসিন,থাইমিন, ইউরাসিল) যুক্ত হয়ে গঠিত হয় নিউক্লিওসাইড) যেমন-অ্যাডিনোসিন একটি নিউক্লিওসাইড। নিউক্লিওটাইড তৈরি করাই এর কাজ।
নিউক্লিওটাইড (Nucleotide) : নিউক্লিওসাইডের সাথে = ফসফেট যুক্ত হয়ে গঠিত হয় নিউক্লিওটাইড যেমন-অ্যাডিনোসিন ৫ মনোফসফেট (AMP) ও সাইটোসিন ৫ মনোফসফেট (CMP) হলো দুটি নিউক্লিওটাইড।
ডাইনিউক্লিওটাইড (Dinucleotide) : দুটি নিউক্লিওটাইড একত্রে সংযুক্ত থাকলে তাকে ডাইনিউক্লিওটাইড (di=two) বলে । এক্ষেত্রে একটি নিউক্লিওটাইডের শর্করা অণুর 5 কার্বনের সাথে অন্য নিউক্লিওটাইডের শর্করা অণুর 3´ কার্বন পরমাণু ফসফো-- ডাই-এস্টার বন্ধনের দ্বারা যুক্ত থাকে ।
পলিনিউক্লিওটাইড (Polynucleotide) : যখন অনেকগুলো নিউক্লিওটাইড একত্রে সংযুক্ত হয়ে শেকল গঠন করে তখন তাকে পলিনিউক্লিওটাইড (poly=many) বলে। এক্ষেত্রে একটি নিউক্লিওটাইডের শর্করা অণুর 5 কার্বনের সাথে সন্নিহিত নিউক্লিওটাইডের শর্করা অণুর 3 কার্বন পরমাণু ফসফো-ডাই- এস্টার বন্ধনের দ্বারা যুক্ত থাকে প্রকৃতপক্ষে দুটি বিপরীতমুখী পলিনিউক্লিওটাইড শেকল DNA অণু গঠন করে । এজন্য DNA অণুকে রাসায়নিক গুণগতভাবে নিউক্লিওটাইডের পলিমার বা পলিনিউক্লিওটাইড বলে।
নিউক্লিক এসিড ২ প্রকারঃ
* DNA
* RNA